শাহী আল-সাদাত: নেটওয়ার্কিং ও শিক্ষামূলক ক্যারিয়ারে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

শাহী আল-সাদাত: নেটওয়ার্কিং ও শিক্ষামূলক ক্যারিয়ারে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

শাহী আল-সাদাত একজন ১৫ বছর বয়সী চেঞ্জমেকার, যিনি তার অসামান্য নেটওয়ার্কিং ক্ষমতা এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে, তিনি “দ্য স্টার্টআপ আইও” প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার সকল মুনাফা শিশু অধিকার রক্ষায় ব্যয় করে।

প্রতিষ্ঠানের শুরু এবং সফলতা

শাহী আল-সাদাত ২২ মার্চ, ২০০৯ সালে খুলনা বিভাগের মেহেরপুর জেলার একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। “দ্য স্টার্টআপ আইও” গত পাঁচ মাসে ৭ লক্ষ টাকারও বেশি লাভ করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে শিশু অধিকার রক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছে। তার এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শাহী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যেমন স্টার্টআপ সাইবার, কিডস হেল্পলিঙ্ক, গার্লস টিনসেফ, এবং টিন এক্স, যাদের লক্ষ্য শিশুদের অনলাইন ও অফলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নেটওয়ার্কিং এবং সহযোগিতা

শাহীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় যখন তিনি মেহেরপুর জেলার উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শামীম হাসানের সাথে দেখা করেন। শামীম হাসান এই তরুণের মধ্যে একটি সেবামূলক মনোভাব দেখতে পান এবং তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। শাহীকে তিনি নিজের ছেলের মতো মনে করেন। জেলা প্রশাসকের প্রেরণা ও সহায়তায়, শাহী শিশুদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত উদ্বেগগুলি সমাধান করার মিশনে যাত্রা শুরু করেন।

শিক্ষামূলক কার্যক্রম

“দ্য স্টার্টআপ আইও” এর উদ্যোগে এখন পর্যন্ত মেহেরপুর ও সিলেটের বাইরে বাংলাদেশের আরও পাঁচটি জেলায় ১৫৭টি সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া, এটি আরও বিস্তৃত শ্রোতার কাছে পৌঁছানোর জন্য অনলাইন সেমিনারও আয়োজন করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও সেমিনার আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।

মেয়েদের সুরক্ষা এবং আইনি সহায়তা

শাহী আল-সাদাতের প্রতিষ্ঠান “গার্লস টিনসেফ” বাংলাদেশে কিশোরী মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা প্রদান করছে। শাহী তার মা মোস্ত. সুরাইয়া আক্তার এবং তার বন্ধু মাইশা মালিহা সোহা এর অনুপ্রেরণায় মেয়েদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এটি চালিয়ে যাচ্ছেন। তার দল এ পর্যন্ত প্রায় সাতটি শিশু বিবাহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে।

শাহী “লিগ্যাল এইড” (কিডস হেল্পলিঙ্ক)

শাহী “লিগ্যাল এইড” (কিডস হেল্পলিঙ্ক) নিয়ে কাজ শুরু করেন তার পিতা মো. শফিকুল ইসলাম এবং তার প্রিয় সিনিয়র ব্যক্তি মো. শামীম হাসান এর অনুপ্রেরণায়। কিডস হেল্পলিঙ্ক খুলনা বিভাগে অবস্থিত যা শিশুদের জন্য আইনি সহায়তা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে। এটি মেহেরপুর জেলার সম্মানিত উপ-কমিশনার এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামীম হাসান দ্বারা শুভ উদ্বোধন করা হয়।

নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি

শাহীর নেটওয়ার্কিং ক্ষমতা এবং তার প্রচেষ্টা “দ্য স্টার্টআপ আইও” কে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ পুলিশের সাথে যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সহযোগিতার মাধ্যমে শিশুবিবাহ, শিশু শ্রম, শিশু পাচার এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে একটি পদক্ষেপ এগিয়ে যায়। শাহীর এই সহযোগিতামূলক মনোভাব এবং তার অবিরাম প্রচেষ্টা বাংলাদেশের শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

“শাহী আল-সাদাত তার নেটওয়ার্কিং ক্ষমতা এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিশু অধিকার রক্ষার আন্দোলনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তার এই উদ্যোগগুলি বাংলাদেশের শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে।”

শাহী আল-সাদাত

Scroll to Top